পোস্টগুলি

2018 থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

যমুনার মাঠ

১. ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি। আকাশটা নীল রঙের সমুদ্র মাথার উপরে ছেয়ে আছে, আর মাঝে মাঝে সাদা তুলোর মত সেই নীল সমুদ্র বেয়ে ভেসে যাচ্ছে। দৃশ্যটা সুন্দর, শরত সবসময় মানুষের মনকে একটু উদাসীন করে তোলে। কিন্তু এখানে, এই পরিবেশে সেই উদাসীনতা উবে যায় বাষ্পের মত। যতদুর চোখু যায় শুধু মাটি, পুড়ে বাদামী হয়ে যাওয়া মাটিগুলো ফেটে চৌচির হয়ে শুধু ছড়িয়ে আছে। গাছ তো দুরের কথা, কোথাও কোন ছোটখাটো ঝোপও নেই। আশে পাশে যত লোকালয় সবই দিগন্তে ছবি হয়ে ঝুলে আছে। উপর থেকে দেখলে মনে হবে নাপিত বিশাল ক্ষুর দিয়ে পৃথিবীটাকে ন্যাড়া করতে গিয়ে হঠাত উঠে গিয়েছে, এক্ষুনি এসে বাকিটুকু শেষ করবে। কিন্তু এর মাঝেও একটা বটগাছকে দেখা যায় মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। গাছটার বয়স আশপাশের গ্রামের মত অনুযায়ী চারশ বছর। সেই তুলনায় এর ব্যাপ্তি বেশী না। কিন্তু এই কঠিন পরিবেশে বেচে আছে কি করে সেটা অবাক করার বিষয় বটে। ঈশ্বর বোধহয় দয়া করে গাছটি লাগিয়েছিলেন। এবং পরিচর্যাও স্বয়ং ঈস্বরই নেন সেটাও এখানকার মুরব্বীদের ধারনা। সেটা কতটুকু সত্যি তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এই রুক্ষ কাঠা ফাটা রোদ্দুরেও অল্প কয়েকটা পাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে এতগুলো বছর বেচে থাকা সহজ কথা নয়।

ঋষির পদাবলী (প্রথম পর্ব - আগমন)

১৯৮৮ সাল, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানার সীমানা ঘেষা জামজামি ইউনিয়নের ঘোষবিলা গ্রাম। চারপাশ এখনো পানির নীচে। মানুষ জনের মন থেকে এখনো বিভীষিকাময় বন্যার ভয় দূর হয় নাই। বানভাসি মানুষ কাঁদতে কাঁদতে চোখের নীচে চর ফেলে দিলেও বন্যার জল শুকায় না। প্রত্যেক বাড়ীর সাথেই একটা করে নৌকা বাধা। মানুষজন নৌকায় আর মালপত্র ঘরের চালে। গ্রামের একমাত্র বিদ্যাপীঠ এখন ভাসমান বাজারে পরিনত হইছে। পুরা বাজারটাই নৌকার উপরে। বিকাল বেলা নানান পসরায় ভরা নৌকায় ভরে থাকে বাজারটা। আর সন্ধ্যা হলেই শামসু নানার নৌকা ঘিরে কয়েকজন উৎসাহী মানুষের জটলা। সেটাও ঐ নৌকার উপরেই। ৭টা বাজলেই শামসু নানা তার জাপানী রেডিও খানা গলুই থেকে বের করে সংবাদ ছেড়ে দেয়। আর গ্রামের ময়-মুরব্বি তার লাল চাপান করতে করতে সারা দেশের দুরবস্থা নিয়ে আলোচনা করে এশার ওয়াক্তে যার যার বাড়ি ফিরে যায়। ১৪ই সেপ্টেম্বর, ১৯৮৮। সন্ধ্যার সময় গ্রামের প্রবীন ডাক্তার খন্দকার আবুল হক, প্রতিদিনের মত শামসুর ভাসমান চায়ের দোকানে নৌকা ভিড়ায়। চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। ওদিকে আবার পশ্চিম আকাশে মেঘ করেছে। মেঘের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শামসু জিজ্ঞেস করে, কি গো আব